গাজার উত্তরাঞ্চলে তীব্র লড়াই
গাজার উত্তরাঞ্চলে তীব্র লড়াই

গাজার উত্তরাঞ্চলে তীব্র লড়াই

ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ার সরু গলিপথগুলোতে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র লড়াই হচ্ছে। আর দক্ষিণে রাফার চারপাশে জড়ো হওয়া ইসরায়েলি ট্যাংকগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালিয়েছে।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাজার ঐতিহাসিক আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ার কেন্দ্রস্থলের বাজার এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাঁজোয়া বহর ঢুকে পড়েছে, তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বুলডোজারগুলো বাড়ি, দোকানসহ যা পড়ছে সব গুড়িয়ে দিচ্ছে।

ভিডিও কলে পশ্চিম জাবালিয়ার বাসিন্দা আয়মান রজব রয়টার্সকে বলেন, “বিমান ও ট্যাংকগুলো আবাসিক এলাকা, মার্কেট, দোকান, রেস্তোরাঁসহ সবকিছু গুড়িয়ে দিচ্ছে।”

ইসরায়েল জানিয়েছিল, গাজা যুদ্ধের প্রথমদিকেই তাদের বাহিনী জাবালিয়া পরিষ্কার করে ফেলেছিল, কিন্তু হামাসের যোদ্ধাদের ফের সংঘটিত হওয়ার প্রচেষ্টা রুখে দিতে গত সপ্তাহে আবার তাদের বাহিনী সেখানে ফিরেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে তাদের সেনারা জাবালিয়ায় ৬০ জনেরও বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং একটি ‘ডিভিশনাল পর্যায়ের অভিযানে’ অস্ত্র গুদাম খুঁজে পেয়েছে।

ডিভিশনাল পর্যায়ের অভিযানে সাধারণত কয়েক হাজার সেনা সম্বলিত বেশ কয়েকটি ব্রিগেড অংশ নিয়ে থাকে, তাতে এটি গাজা যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম অভিযানের রূপ নিয়েছে।

আইডিএফ বলেছে, “৭ম ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বহু বিমান হামলা পরিচালনা করেছে, এতে শত্রুরা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি তাদের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।”

মিশরের সীমান্তবর্তী রাফার আকাশে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডু্লি উঠছিল। এখানে বাড়তে থাকা ইসরায়েলি হামলার কারণে শহরটি থেকে কয়েক লাখ মানুষ পালিয়ে গেছে। গাজার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রাফা।

জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র জিনস লার্কে বলেছেন, “লোকজন আতঙ্কিত হয়ে আছে আর পালানোর চেষ্টা করছে।”

তিনি জানান, ইসরায়েলের নির্দেশ অনুযায়ী অধিকাংশ বাসিন্দা উত্তর দিকে উপকূলের দিকে সরে যাচ্ছে কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো কোনো নিরাপদ সড়ক বা গন্তব্য নেই।

শুক্রবার ইসরায়েলি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানগুলোা রাফার কয়েকটি অংশে বোমাবর্ষণ করেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড ও তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, রাফার পূর্বদিকে, দক্ষিণপূর্ব দিকে এবং মিশরের সঙ্গে সীমান্ত ক্রসিংয়ের ভেতরে জড়ো হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে তারা ট্যাংক বিধ্বংসী গোলা ও মর্টারের গোলা ছুড়েছে।

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মূল ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, ৬ মে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর রাফা থেকে ছয় লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাড়ে সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধে অন্তত ৩৫ হাজার ৩০৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করে বলেছে, ব্যাপক অনাহার এবং জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

ইসরায়েল বলছে, হামাসকে ধ্বংস ও তাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই রাফা দখল করতে হবে।

তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার উপকূলে তাদের স্থাপিত অস্থায়ী জেটি থেকে ত্রাণ নিয়ে ট্রাকগুলো ভূখণ্ডটির ভেতরে প্রবেশ করা শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথম অবরুদ্ধ গাজায় সাগরপথে ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হল।

তবে এ উদ্যোগ কোনোভাবেই স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

Check Also

বিএনপি আরো দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করল

বিএনপি আরো দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করল

নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে আরো দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *